গাজী আব্দুল কুদ্দুস : ডুমুরিয়া (খুলনা): নদীর জোয়ারের পানি আর বৃষ্টিতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ও শোভনা ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের হাজারো মানুষ গত তিন মাস পানির সঙ্গে বসবাস করছেন। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাছের খামার ও পুকুর পানিতে একাকার হয়ে গেছে। গ্রামবাসীর একমাত্র বাহক এখন ডিঙি নৌকা। এক ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এলাকার দুটি নদী ও পাউবোর স্লুইচ গেট গুলো দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে নিয়ে মাছ শিকারের ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। জানা গেছে, উপজেলার মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিমল কৃষ্ণ সানার নেতৃত্বে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দশ বছর ধরে অলিখিত চুক্তি হয় এলাকার বিভিন্নজনের সঙ্গে। নদী দুটির বুকে আড়াআড়ি খ- খ- করে শতাধিক স্থানে নেটপাটা দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। একই সঙ্গে এলাকার একাধিক স্লুইচগেট ইজারা দেওয়া হয়েছে। গেট দিয়ে নিয়মিত নদী থেকে নোনা পানি বাঁধের ভেতরে ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই তাদের চরম মূল্য দিতে হয়।
এদিকে সাড়ে ৯ কিলোমিটার সুখ নদী ও সাড়ে চার কিলোমিটার হাতিটানা নদী দুটিসহ এলাকার চারটি স্লুইচগেট অবৈধ দখলে মাছ শিকার চলছে। অন্যদিকে ১৭/১ পোল্ডারে পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর নির্মিত একাধিক স্লুইচ গেট দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি বাঁধের ভেতর তোলা হয়। এ কারণে ধীরে ধীরে ওই স্লুইচ গেটের নদীর অংশের খালটি পলি পড়ে উঁচু হয়ে গেছে। ফলে বাঁধের ভেতর আটকে পড়েছে নোনা পানি। তা ছাড়া বর্ষার পানিও বাঁধের ভেতর আটকে পড়েছে। দ্বিমুখী সমস্যার কারণে নদী সংলগ্ন ১৪টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে গত তিন মাস তারা পানির সঙ্গে বসবাস করছেন। একাধিক মাছ শিকারি বলেন, তারা ইউপি চেয়ারম্যান বিমল বাবুর সঙ্গে বার্ষিক চুক্তির মাধ্যমে নদীতে নেট পাটা ও স্লুইচগেট দিয়ে নদী থেকে পানি তুলে সারা বছর মাছ ধরেন। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে তাদের কাছ থেকে প্রতিবছর চেয়ারম্যান টাকা নিয়ে থাকেন। ঘের ব্যবসায়ী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সুজিৎ ম-ল জানান, নদী-খাল অবৈধ দখলের কারণে মাগুরখালী ও শোভনা ইউনিয়নের কোড়াকাঁটা, সুকোরমারী, ঝরঝরিয়া, হুগলাবুনিয়া, চিত্রামারী, ভ্রম্মারবেড়, খোরেরাবাদ, বৈঠাহারা, গজালিয়া, আন্ধারমানিক, হাবুড়িয়া, বয়লাহারা এবং শোভনা ইউনিয়নের মাদারতলা ও পারমাদারতলা এ ১৪টি গ্রামের মানুষ তিন মাস ধরে পানির সঙ্গে বসবাস করছেন। ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত এক শিক বলেন, এলাকা জুড়ে পানিতে নিমজ্জিত। রাস্তাঘাট পানির নিচে। মানুষের চলাচলে এখন একমাত্র বাহক ডিঙি নৌকা। গাছপালা, পুকুরের মাছ, সবজি েেতর অন্যান্য ফসলসহ হাজার হাজার মাছের খামার পানিতে ডুবে আছে। বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের সদস্য প্রভাষক ব্রজেন সরকার ও স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সরকার অভিযোগ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা এলাকার নদী-খাল ও পাউবোর স্লুইচ গেট গুলো অবৈধভাবে দখল নিয়ে বিভিন্নজনকে ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া চেয়ারম্যান নিজেই সরকারি জমি অবৈধ দখল নিয়ে সেখানে আলিসান বাড়ি বানিয়েছেন। সরকারি বেড়িবাঁধ কেটে নোনা পানির চিংড়ি চাষ, অন্যের জমি দখল, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে নিজের বাড়ির কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা এসব অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পানি নিস্কাশনে দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নদী-খালে অবৈধ আড়াআড়ি বাঁধ ও নেটপাটা অপসারণে অভিযান পরিচালনা করা হবে। খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ১৭/১ পোল্ডারে স্লুইচগেটের পলি অপসারণ করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।