শহিদ জয়, যশোর : যশোরে শাহিদা খাতুন, দুটি পা ও একটি হাত বাদেই জন্ম নেওয়া প্রতিবন্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) অর্জন করার পরও তার ভাগ্যে জোটেনি বিশেষ কোটায় কোন চাকুরি। তবে তিনি থেমে থাকেনি। নানান প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সমাজ উন্নয়নে বিভিন্ন সেবামূলক কাজকর্মের জন্য একাধিক বার ‘জয়িতা’ সম্মাননা পেয়েছেন। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গোপিনাথপুর গ্রামের রফি উদ্দিনের কন্যা শাহিদা খাতুন (৩০)। জন্মগত ভাবেই তার দুটি পা ও বাম হাত নেই। একটি মাত্র হাত (বামহাত) দিয়েই করতে হয় তার সমস্ত কাজ। প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের শাহিদা খাতুন বলেন, আমরা ছয় ভাই বোন। আমি ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ। আমার আব্বা মুদির ব্যবসা করেন। প্রতিবন্ধী হিসেবে নিজেকে সমাজের বোঝা হিসেবে বাঁচতে চাইনি। তাই পড়ালেখা শুরু করি।’ প্রতিবন্ধী ভাতা’ ছাড়া সরকারি বেসরকারি কোন সহায়তা পাইনি। তাপরও কঠিন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দেখিয়ে দিয়েছি ‘আমরাও পারি’। আমি যশোর সরকারি এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এমএ পাশ করেছি। শাহিদার পিতা রফিউদ্দিন বলেন, শাহিদা ছোট বেলায় সবসময় হতাশ থাকত। তার কোন খেলার সঙ্গী ছিলো না। শুধু মাত্র প্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্য বাচ্চারা তার কাছ থেকে দূরে থাকতো। সে নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করত। তার সহপাঠী ও সমবয়সীরা পায়ে ভর দিয়ে দৌঁড়াতো, খেলতো, নাচতো, ছুটতো, সাঁতার কাটতো। কিন্তু এর কোনকিছুই যখন সে করতে পারতো না, তখন সে মনস্থির করলো এই জীবন যখন অন্য জীবনের মতো চলবে না তখন এই জীবনকে অন্যভাবে গড়তে হবে। তখন সে পড়ালেখা শুরু করল। যেহেতু সে নিজে চলাফেরা করতে পারেনা তাই উদ্বোধক মিজান তাকে একটা হুইল চেয়ার দেওয়ায় এখন সে মুটামুটি চলাফেরা করতে পারে।”শাহিদা বলেন, ২০১৫ সালে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বেকার জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে শিখেছি হস্তশিল্প ও কুঠির শিল্পের নানান কাজ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় হয়নি কোন সুযোগ সুবিধা। এমন কী সরকারি কোটায় চাকরির আশা থাকলেও তা ভাগ্যে জোটেনি। বয়সসীমাও পার হতে আর মাত্র একটি বছর বাকি তাই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।
“দিনের পর দিন যখন সকল আশা ভরসা ব্যর্থ হতে চলেছে ঠিক তখনই নিজ গ্রামে একটি ‘প্রতিবন্ধী স্কুল’ গড়ে তুলতে সহযোগিতা চেয়েছিলাম সমাজের বিত্তশালী ও বিবেকবান মানুষের কাছে। কিš ‘কেউ এগিয়ে আসেনি। সর্বশেষ শার্শার উদ্ভাবক মিজানুর রহমান প্রতিবন্ধী স্কুল গড়ার উদ্যোগ নিয়ে প্রাথমিক কাজটি শেষ করেছেন।”
উদ্ভাবক মিজানুর রহমান বলেন, শাহিদা একজন প্রতিবন্ধী হলেও একটি মাত্র হাতে ভর করে লেখাপড়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছে। চাকরি-বাকরি না পেয়ে যখন সে হতাশ হয়ে পড়ে তখন এটা আমার নজরে আসে। তার স্কুল তৈরির কথা আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করলে অনেকেই সহায়তা দিতি চায়। সবার সহায়তায় কাজটি আমি এগিয়ে নিয়েছি।
“শাহিদার স্কুল তৈরির স্বপ্নকে যারা বাস্তবায়ন করতে অর্থায়ন করেছেন তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। বাঁশ খুঁটি টিন দিয়ে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে।” শাহিদার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই স্কুলে শুধু প্রতিবন্ধী শিশুরাই নয়, বয়স্ক ও বিধবা নারীদের শিার ব্যবস্থা করবো। শিতি প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের শতভাগ সুযোগ থাকবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে প্রতিবন্ধীরা হস্তশিল্প ও কুঠির শিল্পের নানান কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখবে।