জিএমঅভি : জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে গতকাল যশোরে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা পুলিশ লাইনে এক আলোচনা সভাও বর্ণাঢ্য র্যালীর আয়োজন করে জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম। যার প্রধান উপদেষ্টা যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক কলেজের অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, প্রেস কাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃস্থানীয় সদস্যরা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বিল্লাল হোসেন।
কমিউনিটি পুলিশিং এর প্রতিটি সদস্য এক সাথে কাজ করার লক্ষে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের শনিবার কমিউনিটি পুলিশং ডে উদযাপন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল যশোর পুলিশ লাইনসে র্যালী ও আলোচনা সভার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হয়। ‘মুজিব বর্ষের পুলিশ নীতি – জনসেবা ও স¤প্রীতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা সভায় কমিউনিটি পুলিশং ফোরাম যশোরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশ একটি অসা¤প্রদায়িক দেশ । এখানে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর কোন সুযোগ নেই। পাশাপাশি তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারী আছে এবং থাকবে । আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, প্রশাসন, পুজাউদযাপন পরিষদ, ইমামপরিষদসহ সর্বস্তরের মানুষ সজাগ ছিল বিধায় যশোরে স¤প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, আগামী মাসে ইউপি নির্বাচন এই নির্বাচন উপলক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা আবারও সমাজে দাঙ্গার সৃষ্টি করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
অপরাধ দমন ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে একটি সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন সমাজ জেলাবাসীকে উপহার দিতে যশোর পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আদর্শ সমাজ গঠনে সবার আগে নির্মূল করতে হবে মাদক, অস্ত্রবাজ ও চাঁদাবাজকে। তাই মাদক অস্ত্র ও চাঁদাবাজদের সাথে জড়িত কোন গডফাদারকে ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল কমিউনিটি পুলিশং ডে উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন যশোরের কমিউনিটি পুলিশিং ফোরমের প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার বিপিএম(বার),পিপিএম। পুলিশ সুপার বলেন, আগে পুলিশ ছিল শাসকদের জানমাল নিরাপত্তার দায়িত্বে। বর্তমান পুলিশ সাধারন মানুষের সাথে দুরত্ব কমিয়ে তাদের জীবন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সেই সময় বাংলার পুলিশ মাত্র থ্রী নট থ্রী রাইফেল হাতে নিয়ে দুশমনদের ভারী অস্ত্রের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শেখমুজিবুর রহমান নেই। কিন্তু তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নতির শিখরের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ পুলিশ তাঁর মিশনের সাথে থেকে সহযোগী করে চলেছে। একটি চক্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যকে বাধাগ্রস্থ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চেষ্টা কখনও সফল করতে দেবে না বাংলাদেশ পুলিশ। তিনি হুশিয়ার উচ্চারন করে বলেন, মাদক, অস্ত্র ও চাদাবাজদের সাহায্যকারী কোন গডফাদার যশোরে থাকবে না। তিনি আরও বলেন, মাদকের সাথে বা দুর্নীতির সাথে যদি কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই অভিযোগ বক্সের মাধ্যমে বা সরাসরি তাকে জানাতে হবে । তিনি বলেন, পুলিশ একা কখনো সমাজ থেকে অপরাধ দুর করতে পারবে না যদি সাধারন মানুষ তাদেরকে সাহায্য না করে। পুলিশ সুপার বলেন, করোনার কারনে পুলিশ তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে। সামনে ইউপি নির্বাচন, সমাজের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে অবশ্যই পুলিশ বিশেষ অবদান রাখবে। পুলিশ ও জনসাধারনের পারস্পারিক সহযোগীতাই কমিউনিটি পুলিশিং চালিকার মুলশক্তি। আধুনিক এ দর্শন জনগনকে পুলিশের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রাণবন্ত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জনগনের সেবা নিশ্চিত করে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায়
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু এটা কথার কথা নয়, কাজের মাধ্যমে তার প্রমান দেখতে চায় জনগণ। তবে এ কথা সঠিক পুলিশের পুরাতন ধ্যান ধারনার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন পুলিশ সত্যিই জনগণের জন্য কাজ করে। আগে মানুষ পুলিশকে দেখলে যেভাবে ভয় পেত এখন আর সে ভাবে ভয় পায় না। কারণ মানুষের পুলিশ ভীতি দূর হয়েছে। পুলিশ এখন আর আতঙ্কের নাম নয়, বন্ধুত্বের নাম। তবে হ্যা যারা অপরাধী, সমাজবিরোধী, সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের সাথে জড়িত পুলিশ তাদের কাছে আতঙ্কের নাম না হলে চলবে না। পুলিশী শাষন সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজের শান্তি বিনষ্ট হবে। ফলে পুলিশ ও জনগণ এক হয়ে কাজ করতে পারলেই সমাজ বিরোধীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে।
প্রেসকাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, প্রতিবছর একবার শুধু পুলিশিং ডে পালন করলে হবে না। প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশং ফোরামের কমিটি করে এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে কাজ করতে হবে। এলাকার মাদক কারবারি ও মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি কমিউনিটি পুলিশং ফোরামের কার্যক্রম গতিশীল করতে জেলা পুলিশের প্রতি জোর দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, পুলিশের এখন শুনার মানসিকতা হয়েছে। বর্তমান পুলিশকে সহজেই কাছে পাওয়া যায়। তারা সাধারণ মানুষের অভিযোগ মনোযোগ সহকারে শুনে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।
পৌরসভার মেয়র হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, বিভিন্ন এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের নিয়োজিত সদস্যরা ঠিকমত বেতন পায়না। অর্থের অভাবে তারা সঠিকভাবে কাজ করেনা। তাই যে ভাবেই হোক তাদের মধ্যে অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে।