চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় তরিকুল ইসলাম নামে এক কৃষকের ৫৩শতাংশ (দেড়বিঘা) জমির সিমগাছ কেটে সাবাড় করেছে দূর্বৃত্তরা। এতে ওই কৃষকের আড়াই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাঠের কৃষকরা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম চৌগাছা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতের কোন এক সময়ে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা মাঠে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের ধারের ওই জমির সম্পূর্ণ ক্ষেতের সিমগাছ কেটে ফেলে কে বা কারা।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে ওই ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় ক্ষেতের ২০/২৫টি বেডের মধ্যে তিন/চারটি বেড ছাড়া সম্পূর্ণ ক্ষেতের সিমগাছ কেটে দেয়া। রোদের তাপে গাছগুলি শুকাতে শুরু করেছে। এসব দেখতে এসে ওই কৃষকের স্ত্রী ক্ষেতের পাশেই সঙ্গা হারিয়ে পড়ে যান। আর কৃষক তরিকুল ইসলাম যাকে পাচ্ছেন তাঁকেই জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কাঁদছেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালেও তিনি, স্ত্রী ও মাঠ পরিচর্যাকারী চামেলি বেগম নামে তার গ্রাম সুবাদে পুত্রবধূ ক্ষেতে সিমের ফুল ছুইয়ে বাড়িতে সকালের খাবার খেতে যান। পরে ক্ষেতে এসে দেখন বিভিন্ন সিমগাছ রোদে শুকিয়ে (আড়িয়ে) যাচ্ছে। তখন তিনি পুত্রবধূকে বলেন দেখো তো গাছ এরকম হচ্ছে কেন? চামেলি বলেন হয়তো মাটির নিচ থেকে ওঠা ইউচুঙ্গো পোকায় গাছ কেটে দিয়েছে (স্থানীয় ভাষায় ঘুগরো পোকা)। পরে তাঁরা খেয়াল করে দেখি গাছগুলি কেটে দেয়া রয়েছে। তরিকুল ইসলাম বলেন, এই ক্ষেতে এখন পর্যন্ত সার কিনাশকে ৫০ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়েছে। দুইদিন তিনি সিম বিক্রি করেছেন। শুক্রবার আরও ৬০ কেজি সিম বাজারে বিক্রি করা যেতো। পরের সোমবার থেকেই পাঁচ থেকে ছয় মন করে সিম উঠতো। তিনি বলেন, একজন এত গাছ কাটতে পারার কথা নয়। কয়েকজনে মিলে রাতের আঁধারে এই কাজ করেছে। মাঠের কৃষক খাইরুল ইসলাম, আতিয়ার রহমানসহ অন্য কৃষকরা বলেন, চাষী হিসেবে যে অভিজ্ঞতা তা থেকে বলতে পারি যে সিমগাছ নষ্ঠ করা হয়েছে তাতে তাঁর আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জমি তাঁর পৈত্রিক হওয়ায় লিজের টাকার ক্ষতি থেকে তিনি বেঁচেছেন। কৃষক তরিকুল বলেন, আমার কোন শত্রু নেই। কারও সাথেই আমার কোন দ্বন্দ্ব নেই। কে কেন এই ক্ষতি আমার করলো বুঝতে পারছি না। আমি সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক বিচার চাই। মাঠের কৃষাণ কৃষাণিরাও তাঁর কথায় সম্মতি দেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, তরিকুল কোন রাজনীতি করে না। কারও সাথে তাঁর কখনও কথাকাটাকাটি হয়েছে বলেও শুনিনি। মাঠই তাঁর ধ্যান জ্ঞান। যেই করুক তাঁর শাস্তি হওয়া দরকার। সকালে তরিকুল সংবাদ দিতেই তার ক্ষেতে এসে দেখি এই অবস্থা। তাঁকে সাথে করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। চৌগাছা থানাও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।