মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর : যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় ডায়াবেটিসসহ বড় বড় আটটি রোগের ঔষধ খ্যাত ভেষজগুণ সমৃদ্ধমৃ ‘ড্রাগন’ ফলের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। চৌগাছা, ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া, কেশবপুর, মনিরামপুর, শার্শা, বেনাপোল, রাজগঞ্জ এলাকায় চাষের পরিমান বেশি।
শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী সালতা-ফুলসারা গ্রামের রাসেদুলদু ইসলাম ও আল হুসাইন দুই ভাই নয় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তাদের দেখাদেখি উপজেলায় আরো কয়েক জন বানিজ্যিক ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। এই তথ্য দিয়েছেন, শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র। উপজেলায় ২০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে তিনজন চাষি ড্রাগন চাষ করলেও ফসলি জমি কিম্বা বাসাবাড়ির ছাদে অন্তত: ২০০ সৌখিন চাষী ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ড্রাগন চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। শুধু মাত্র পরিচর্যা করেই গাছে ফল আনা যায়। ১৪ মাস বয়স হওয়ার পর গাছে ফল আসতে শুরু করে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। বাজারে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি ফল বাজারে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষী আল হুসাইন বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করতে সর্বমোট খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকা। বছর শেষে ৩৫ লাখ টাকা ড্রাগন ফল বিক্রির আশা করছেন তিনি। চার বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন রাসেদুল। তিনি বলেন, পরীা মুলক দুই বছর আগে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এবছর ফল আসতে শুরু করেছে। আজ আমি স্বাবলম্বী। এটি একটি লাভজনক চাষ। তবে প্রথম অবস্থায় টাকা পয়সা খরচ একটু বেশি হওয়ায় সরকারি সহযোগিতা পেলে এচাষ দ্রুত বিস্তার লাভ করবে বলে মনে করেন রাসেদুল। বানিজ্যিক ভাবে বাগআঁচড়ার বসতপুর গ্রামের মনিরুজ্জামান সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর অক্টোবর মাসে ড্রাগনের কাটিং লাগানো হলে মার্চ এপ্রিলে ফুল আসা শুরু করে। এক বছর পর ফল পুরোপুরি বিক্রি করা যায়। একটি গাছ এক নাগাড়ে ৩০ বছর ফল দেয় বলে জানান মনিরুজ্জামান। রাসেদুল বলেন, ঢাকার বাজারে ড্রাগনের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। বাজারটি এখনো বিদেশী ফলের উপর নির্ভরশীল। কারওরান বাজার মার্কেটে এবছরের শুরুতে ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি প্রতি কেজি ৭০০ টাকা দরে। কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪/৫০০ টাকায়। সৌখিন ড্রাগন চাষি টেংরা গ্রামের জাকির হাসান শান্ত বলেন, তিন বছর আগে বাড়ির ছাদে আমি ড্রাগন ফলের গাছ লাগায়। গত বছর থেকে পুরোপুরি ফল আসতে শুরু করেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই শুধু পরিচর্যা করে ড্রাগন ফল চাষ করা যায় । সিমেন্টের তৈরি পিলারের উপরে টায়ার বেঁধে দিলে তাতে জড়িয়ে ওঠে গাছগুলি ফল দেওয়া শুরু করে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্ম র্তা সুখেন্দু কুমার মজুমজুদার জানান, ড্রাগন চাষে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের পুরোপুরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের পরামর্শের ফলে চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ওদের দেখাদেখি এলাকার অনেক চাষি এ ড্রাগন ফলচাষে সম্পৃক্ত হয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্ম র্তা নারায়ন চন্দ্র জানান, শুরু হয়েছে ড্রাগন চাষ। প্রতি বিঘা জমিতে এক থেকে তিন লাখ টাকার উপরে লাভ করা সম্ভব। ড্রাগন চাষে নিয়মিত পর্যবেণসহ চাষিদের প্রশিণ উৎসাহ ও পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। আগামীতে চাষিদের আরো সহযোগিতা ও প্রশিণ বাড়ানো হবে বলে জানান নারায়ন চন্দ্র। নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুসমুতাক আহম্মেদ বলেন, দেশে অপ্রচলিত একটি ফল ড্রাগন। ক্যাকটাস গোত্রের এই গাছ দেখে সবাই এটাকে সবুজ ক্যাকটাস বলে মনে করে। মধ্য আমেরিকায় এই ফল বেশি পাওয়া যায়। তবে এশিয়ার অনেক দেশে এখন বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে ফলটির। এর মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া প্রমুখ। ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এটি খুব উপকারি ফল। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে তাই শরীরের চর্বি ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোর কাজে এই ফলটি ব্যবহার হয়। এবং তা ফলপ্রসুও বটে।